ভাইমার প্রজাতন্ত্র বা ওয়েইমার প্রজাতন্ত্র কী | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতখানি দায়ী | রুশ বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা কর

ভাইমার প্রজাতন্ত্র বা ওয়েইমার প্রজাতন্ত্র কী | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতখানি দায়ী | রুশ বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা কর


বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে  ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন



[প্র] ভাইমার প্রজাতন্ত্র বা ওয়েইমার প্রজাতন্ত্র কী?


ভূমিকা : দেখা যায় জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে একটি নির্বাচন হয় এবং এর মাধ্যমে জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য : এই ভাইমার প্রজাতন্ত্রের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো—

  • ১. এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ফ্রেডরিক ইবার্ট এবং শেষ রাষ্ট্রপতি ছিলেন হিন্ডেনবার্গ।
  • ২. জার্মানির বার্লিন শহরের নিকটবর্তী ভাইমার নামক শহরে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এ কারণেই এই প্রজাতন্ত্র ভাইমার প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত।
  • ৩. এই প্রজাতন্ত্র জার্মানিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ও একাধিক গণতান্ত্রিক সংস্কার চালু করে।

ব্যর্থতা : ভাইমার প্রজাতন্ত্রের মোট ১৯ টি মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। কিন্তু বিষয়টি হলো কোন মন্ত্রী সবাই জার্মানির সমাধান করতে পারেনি। এই প্রজাতন্ত্র ব্যর্থতার কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলো—

  • ১. বামপন্থী -দক্ষিণপন্থী চাপ : ভাইমার প্রজাতন্ত্রকে শুরু থেকেই বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলন ও দক্ষিণপন্থী জঙ্গি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চাপের মধ্য পড়ে।
  • ২. দুর্বলতা : লক্ষ্য করা যায় প্রথম থেকেই এই প্রজাতন্ত্র ছিল দুর্বল, তাই বারবার মন্ত্রিসভার বদল হয়েছিল তা লক্ষ করা যায়।
  • ৩. হিটলারের ক্ষমতা লাভ : অবশেষে লক্ষ করা যায় জার্মানিতে নাৎসি দল ও হিটলার ক্ষমতালাভ করলে শেষ পর্যন্ত এই প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটেছিল।

[প্র] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতখানি দায়ী ?


ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে ভার্সাই সন্ধি হয়েছিল। এই ভার্সাই সন্ধির কঠোরতা এবং জার্মানির প্রতিশোধস্পৃহা বলে জানা যায়।

ভার্সাই সন্ধির শর্ত : ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বিজয়ী মিত্রপক্ষ এবং পরাজিত জার্মানির মধ্য ভার্সাই -এর রাজপ্রাসাদে স্বাক্ষরিত ভার্সাই সন্ধিতে—

  1. অনুদার ব্যবহার : জার্মান প্রতিনিধিদের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তাদের এই সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
  2. কঠোর শর্ত : 'ভার্সাইসন্ধি পত্রে’ জার্মানিকে যুদ্ধের মূল অপরাধী সাব্যস্ত করে জার্মানির উপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়।
  3. ভৌগলিক শর্ত : জার্মানি ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন, বেলজিয়ামকে ইউপেন ও মেলমেদি এবং পোল্যান্ডকে পোসেন ও পশ্চিম প্রাশিয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
  4. অর্থনৈতিক শর্ত : ভার্সাই সন্ধির ক্ষতিপূরণ রূপে ৬৬০ কোটি পাউন্ড নগদ অর্থ, বাণিজ্য এবং শিল্পকণিক সমৃদ্ধ সার উপত্যকা মিত্রপক্ষকে দিতে বাধ্য করা হয়।
  5. সামরিক শর্ত : জার্মানির জল, স্থল ও বিমান বাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে সামরিক দিক থেকে তাকে এমনভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে সে কোনদিনই শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠতে না পারে।

উপসংহার : ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো--১. জার্মান জাতির মনে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ২.ভার্সাই সন্ধির সংশোধনকে কেন্দ্র করেই জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে।



[প্র] রুশ বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা কর।


ভূমিকা : রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব শুধুমাত্র রাশিয়ার ইতিহাসেই নয় বিশ্ব ইতিহাসের ক্ষেত্রেও তা ছিলো যুগান্তকারী ঘটনা, কারণ এই বিপ্লব রাশিয়ার ভেতরে ও বাইরে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল বলে জানা যায়।

প্রভাব

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের প্রভাব গুলি হল—

রাজনৈতিক প্রভাব : এই বিপ্লবের রাজনৈতিক প্রভাব গুলি হল—
  • ১. জার তন্ত্রের পতন ঘটে ও সর্বহারার সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। 
  • ২. সাধারণ মানুষকে নিয়ে সোভিয়েত বা পরিশোধ গঠন করা হয়।

গির্জার প্রভাব হ্রাস : গির্জার প্রভাব ধ্বংস হয় ও এর প্রভাব থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করা হয়। গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জাতীয়করণ করা হয়।

অর্থনৈতিক প্রভাব : 
  • (১) শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করে শ্রমিকদের হাতে এই পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে। 
  • (২) শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারিত হয় ৮ ঘন্টা।

সামাজিক প্রভাব : 
  • ১. রাশিয়ার মানুষদের মধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ২. শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণীর জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়।

পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে শান্তি স্থাপন : লক্ষ করা যায় বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়া নিজেকে সরিয়ে নেয় এবং জার্মানির সঙ্গে ব্রেস্ট লিটোভস্ক এর সন্ধি স্বাক্ষর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করে।

সমাজতন্ত্র ও ধনতান্ত্রিক আদর্শের বিরোধের সূচনা : রাশিয়া রাষ্ট্রনীতি ধনতান্ত্রিক দেশগুলির পক্ষে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে রাশিয়া থেকে বলশেভিক শাসনকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা শুরু করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে রুশ বিপ্লবের ফলে শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল তা নয়, রাশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।

নবম শ্রেণির অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন

  1. ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
  2. বিপ্লবী আদর্শ । নেপোলিয়ন
  3. উনবিংশ শতকে ইউরোপ
  4. শিল্পবিপ্লব
  5. বিংশ শতকে ইউরোপ
  6. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
  7. জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ



অন্যান্য ক্লাসের পোস্ট




ফাইল : বিংশ শতকে ইউরোপ  | 15+ ব্যাখ্যামূলক ৪ নম্বরের প্রশ্ন

ফাইল টাইপ : পিডিএফ

সোর্স : গুগল ড্রাইভ

ডাউনলোড : File Link

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url