লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা সংক্ষেপে NEP সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো | টাকা লেখো: হুভার মোরাটোরিয়াম | কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল

বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে  ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন



লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা সংক্ষেপে NEP সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো | টাকা লেখো: হুভার মোরাটোরিয়াম | কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল




[প্র] লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা সংক্ষেপে NEP সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।


লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সাম্যবাদী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও কিছুদিনের মধ্যে রুশ জনগণ সোভিয়েত সরকারের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ‘সোভিয়েত সরকার নিপাত যাক' এই স্লোগান রাশিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। উৎপাদন হ্রাস পায়, জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় লেনিন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে দশম পার্টি কংগ্রেসে 'নতুন অর্থনৈতিক নীতি' (NEP) ঘোষণা করেন।

NEP-র গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ :

কৃষিক্ষেত্রে : আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়। কৃষকদের উদ্‌বৃত্ত শস্য বাজারে বিক্রি করার অধিকার দেওয়া হয়। কৃষি ব্যাংক তৈরি করে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

শিল্পক্ষেত্রে : যেসব শিল্প কারখানায় ২০ জনের কম শ্রমিক কাজ করে তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিদেশি মূলধনকে স্বাগত জানানো হয়েছিল।

ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে : ব্যাংক ব্যবস্থা, বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিবহণ ব্যবস্থা, বৃহৎ শিল্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দেশে ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে গিয়েছিল। সরকারি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে মূল্যবৃদ্ধি রদ করা হয়।

NEP-র প্রকৃতি

অনেক ঐতিহাসিক বলেন লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি ছিল সাম্যবাদ থেকে বিচ্যুত হয়ে ধনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রথম ধাপ। আবার অনেকে বলেন লেনিনের নতুন অর্থনীতি গ্রহণ ছিল প্রয়োজনভিত্তিক মিশ্র অর্থনীতি। আসলে লেনিন পুঁথিগত কমিউনিজম থেকে বাস্তব প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে NER গ্রহণ করেছিলেন।




[প্র] টাকা লেখো: হুভার মোরাটোরিয়াম


হারবার্ট হুভার ছিলান আমেরিকার রাষ্ট্রপতি (১৯২৯-১৯৩৩ খ্রি.)। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন তিনি ঘোষণা করেন যে, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য বিভিন্ন দেশ পরস্পরের ঋণশোধ করা স্থগিত রাখবে। এই ঘোষণা 'হুভার স্থগিতকরণ' বা 'হুভার মোরাটোরিয়াম' নামে পরিচিত।

হুভার মোরাটোরিয়ামের পটভূমি

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাই সন্ধিতে মিত্রপক্ষ জার্মানির উপর বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয়। জার্মানি যাতে মিত্রশক্তির ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে পারে সেজন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ডয়েস ও ইয়ং পরিকল্পনা অনুসারে ঋণ দিত। জার্মানি সেই অর্থ দিয়ে মিত্রশক্তির পাওনা মেটাত। আবার মিত্রশক্তিভুক্ত দেশগুলি সেই অর্থ দিয়ে যুদ্ধকালে আমেরিকার কাছে নেওয়া ঋণের টাকা শোধ করত।

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অর্থনৈতিক মহামন্দা সৃষ্টি হলে আমেরিকার পক্ষে জার্মানিকে ঋণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এদিকে জার্মানিও আমেরিকার সাহায্য না পাওয়ার জন্য মিত্রশক্তির ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে পারছিল না। এর ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। এই সংকটমোচনের জন্য আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হুভার তাঁর ঋণশোধ স্থগিতকরণের নীতি ঘোষণা করেন।

হুভার মোরাটোরিয়ামের ফলে আমেরিকা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়নি। ১৯৩৩-এর নির্বাচনে হুভারের রিপাবলিকান দল পরাজিত হয় এবং ডেমোক্রেটিক দলের ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।


[প্র] কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল?


ইউরোপের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রপক্ষে (ব্রিটেন, ফ্রান্স) যোগদান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, অস্ত্র ও ঋণলাভ করে মিত্রপক্ষ নানাভাবে উপকৃত হয়। মিত্রপক্ষের শক্তিবৃদ্ধির ফলে জার্মানির পতন ত্বরান্বিত হয়।

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উদ্দেশ্য হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ঘোষণা করেন যে, ‘গণতন্ত্রের জন্য বিশ্বের নিরাপত্তা বিধান করা এবং মানবাধিকার রক্ষা করা আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।' এটিই ছিল মিত্রপক্ষের যুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে প্রথম ঘোষণা।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় : উড্রো উইলসন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা নীতি' ঘোষণা করেন। এই চোদ্দো দফা-র সর্বশেষ দফায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। তাঁর আদর্শের ভিত্তিতেই জাতিসংঘ বা Leauge of Nations প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মিত্রপক্ষ ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ঋণ দিয়ে ইউরোপীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠায় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

পরিশেষে বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

নবম শ্রেণির অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন

  1. ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
  2. বিপ্লবী আদর্শ । নেপোলিয়ন
  3. উনবিংশ শতকে ইউরোপ
  4. শিল্পবিপ্লব
  5. বিংশ শতকে ইউরোপ
  6. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
  7. জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ



অন্যান্য ক্লাসের পোস্ট





ফাইল : বিংশ শতকে ইউরোপ  | 15+ ব্যাখ্যামূলক ৪ নম্বরের প্রশ্ন

ফাইল টাইপ : পিডিএফ

সোর্স : গুগল ড্রাইভ

ডাউনলোড : File Link

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url