নারদনিক আন্দোলন সম্পর্কে লেখো | টীকা লেখো : ভার্সাই সন্ধি | ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) অর্থনৈতিক শর্ত

বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে  ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন



নারদনিক আন্দোলন সম্পর্কে লেখো | টীকা লেখো : ভার্সাই সন্ধি | ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) অর্থনৈতিক শর্ত



[প্র] নারদনিক আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।


ভূমিকা : দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শাসনকালে গড়ে ওঠা নিহিলিজম আন্দোলনের একটি পর্যায় ছিল নারদনিক আন্দোলন।

আন্দোলনের অর্থ : রুশ শব্দ 'নারদ' কথার অর্থ জনগণ। এই আন্দোলনের নাম 'নারদনিক আন্দোলন' নামে পরিচিত।

মতাদর্শ : নারদনিক আন্দোলন বাকুনিন, আলেকজান্ডার প্রমুখ দার্শনিকদের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :

  1. কৃষকদের উপর গুরুত্ব : কৃষকদের আন্দোলনে যুক্ত করলে পুরনো যার তন্ত্র ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যাবে ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
  2. আদর্শ প্রচার : এই উদ্দেশ্যে দলে দলে শিক্ষিত যুবকরা আন্দোলনে যোগদান করে। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে জনতার কাছে যাওয়ার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁচায়।
  3. কৃষক বিদ্রোহ : নেতারা স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত করতে সচেষ্টা হন এবং 'জনগনের ইচ্ছা' নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
  4. হত্যার ষড়যন্ত্র : ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যা করে জারতন্ত্র উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।

ব্যর্থতার কারণ : এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। তার কারণ বলেই নিম্নে আলোচনা করা হলো—১. বিপ্লবীদের মধ্য কোন সাংগঠনিক ঐক্য ছিল না। ২. এই আন্দোলন দমন করার জন্য রুশ সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করে বলে জানা যায়।



[প্র] টীকা লেখো : ভার্সাই সন্ধি


১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ ও পরাজিত জার্মানির মধ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

সন্ধির উদ্দেশ্য : ভার্সাই সন্ধির উদ্দেশ্য ছিল—
[1] জার্মানিকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখা।
[২] প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি জার্মানির কাছ থেকে আদায় করা।

ভার্সাই সন্ধির শর্ত : ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলিকে ভূখণ্ড সম্পর্কিত, ও অর্থনৈতিক, ও সামরিক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করতে পারি।

ভূখণ্ড-সম্পর্কিত শর্ত : ভার্সাই সন্ধির ভূখণ্ড-সম্পর্কিত শর্ত হল—ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন; বেলজিয়ামকে ইউপেন, মেলমেডি, মরেসনেট; লিথুয়ানিয়াকে মেমেল বন্দর দিতে হবে। নবগঠিত স্বাধীন পোল্যান্ডকে পোজেন; পশ্চিম প্রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে পোলিশ করিডোর দিয়ে পোল্যান্ডকে সমুদ্রপথে যোগাযোগের জন্য ছেড়ে দিতে হবে।

অর্থনৈতিক শর্ত : জার্মানির ওপর ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্ত ছিল—[১] ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১ মের মধ্যে জার্মানিকে ১০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে যদিও পরবর্তীকালে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি পাউন্ড ধার্য করা হয়। [২] জার্মানির খনিজ সম্পদ ও শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি, যথা— রূঢ়, সার প্রভৃতি অঞ্চল অধিগ্রহণ করা হবে।

সামরিক শর্ত : ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির ওপর আরোপিত সামরিক শর্তগুলি হল–জার্মানির সামরিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে কেবল অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১ লক্ষ সৈন্য রাখা হবে। এবং জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা বাতিল করতে হবে।

ইতিহাসে বহু সমালোচিত ও নিন্দিত সন্ধি ছিল ভার্সাই সন্ধি। একে ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি' বলে অভিহিত করা হয়। আবার, ঐতিহাসিক ই. এইচ. কার বলেছেন, ভার্সাই সন্ধির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।




[প্র] ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) অর্থনৈতিক শর্ত কী ছিল?


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদের মিরর হলে মিত্রপক্ষের সঙ্গে পরাজিত জার্মানির যে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় তাকে 'ভার্সাই সন্ধি’ বলা হয়। এই সন্ধিতে জার্মানিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অপরাধী বলে গণ্য করা হয় এবং জার্মানির উপর বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়।

ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্ত : ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর যেসব কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপ করা হয়েছিল সেগুলি হল—

  1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে অপরাধী বলে ঘোষণা করে তার উপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয়।
  2. ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নীতি নির্ধারণ করার জন্য একটি ক্ষতিপূরণ কমিশন গঠন করা হয়।
  3. জার্মানির অধিকাংশ বাণিজ্য বন্দরগুলি ফ্রান্সকে এবং যুদ্ধ- জাহাজগুলি ব্রিটেনের হাতে তুলে দেবার কথা বলা হয়।
  4. ফ্রান্সের কয়লাখনিগুলি ধ্বংস করার অপরাধে জার্মানির কয়লা সমৃদ্ধ সার অঞ্চল ১৫ বছর ফ্রান্সের অধীনে থাকবে বলে ঠিক করা হয়। ১৫ বছর পর গণভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে তারা কোন্ রাষ্ট্রের অধীনে থাকবে।
  5. জার্মানির বাজার মিত্রপক্ষের শিল্পদ্রব্য বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
  6. জার্মানির বাইরের জার্মান নাগরিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার মিত্রপক্ষের হাতে থাকবে।
  7. জার্মানি মিত্রপক্ষকে লোহা, কাঠ, কয়লা, রাবার, অন্যান্য খনিজ দ্রব্য, ৫ হাজার রেল ইঞ্জিন ও দেড় লক্ষ মোটর গাড়ি দিতে বাধ্য থাকবে।

ফলাফল : ভার্সাই সন্ধি ছিল জার্মানির উপর কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত। এর কারণে পরবর্তীকালে জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে।


নবম শ্রেণির অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন

  1. ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
  2. বিপ্লবী আদর্শ । নেপোলিয়ন
  3. উনবিংশ শতকে ইউরোপ
  4. শিল্পবিপ্লব
  5. বিংশ শতকে ইউরোপ
  6. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
  7. জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ



অন্যান্য ক্লাসের পোস্ট





ফাইল : বিংশ শতকে ইউরোপ  | 15+ ব্যাখ্যামূলক ৪ নম্বরের প্রশ্ন

ফাইল টাইপ : পিডিএফ

সোর্স : গুগল ড্রাইভ

ডাউনলোড : File Link

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url