প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয় | বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে কারা পরিচিত | ভার্সাই সন্ধিকে জবরদস্তি মূলক সন্ধি বলা হয় কেন | কেন ' চোদ্দদফা নীতি ' ঘোষনা করেন
প্রিয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা,
বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয় | বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে কারা পরিচিত | ভার্সাই সন্ধিকে জবরদস্তি মূলক সন্ধি বলা হয় কেন | কেন ' চোদ্দদফা নীতি ' ঘোষনা করেন
২১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগে ইউরোপে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল এই শক্তি জোট। এই শক্তি জোট গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —
- ১. এক পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জাপান ইত্যাদি পোর্তুগাল যা মিত্রশক্তি নামে পরিচিত ছিল।
- ২. অপরপক্ষে অস্ট্রিয়া, ইতালি, তুরস্ক বুলগেরিয়া যা অক্ষশক্তি নামে পরিচিত।
পরিশেষে বলা যায় ইতালির অক্ষ শক্তি ত্যাগ করে মিত্রশক্তিতে যোগদান ।
২২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয় ?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয়। এর কারণগুলি মেনে আলোচনা করা হলো —
- ১. চার বছর স্থায়ী এই যুদ্ধ সামরিক বাহিনীর সেনারা পাশাপাশি অসামরিক এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল বলে জানা যায়।
- ২. বিস্তার – ইউরোপ ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ জলে, স্থলে ও আকাশে বিস্তার লাভ করে সর্বব্যাপী যুদ্ধে পরিনত হয়েছিলো।
- ৩. ধ্বংসাত্মক –এই যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক এবং ( গির্জা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও যুদ্ধরত দেশগুলি আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ) ও ব্যয়বহুল ।
২৩. প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে গৃহীত সন্ধিগুলির নাম উল্লেখ কর ?
প্যারিসে শান্তি সম্মেলন গৃহীত হয়েছিল। এই সন্ধি লন গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —---
- ১. জার্মানির সঙ্গে ভার্সাই এর সন্ধি
- ২. অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সেন্ট জার্মেইনের সন্ধি।
- ৩. বুলগেরিয়ার সঙ্গে নিউলির সন্ধি ।
- ৪. হাঙ্গোরির সঙ্গে ট্রিয়ান এর সন্ধি ।
- ৫. তুরস্কের সঙ্গে সেভরের সন্ধি।
২৪. প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে কারা পরিচিত হয়েছিল?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে । প্যারিসে এই বিশ্বযুদ্ধ টি শান্তি সম্মেলনে বিজয়ী মিত্রশক্তির প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছিল মোট চারটি দেশের। তাদের নামগুলি হল উইড্রো উইলসন মার্কিন রাষ্ট্রপতি, লয়েড জর্জ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ক্লিমেশো ইতালির প্রধানমন্ত্রী প্রমুখ এরাই বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে পরিচিত ছিল।
২৫. ভার্সাই সন্ধির দুটি সামরিক শর্ত লেখ ?
বেশ কয়েকটি শর্ত ছিল ভার্সাই সন্ধির। এই সন্ধির উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিকে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্ত দিক থেকে দুর্বল করে দেওয়া। জার্মানির সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য এই সন্ধিতে – ১. জার্মানির সেনাবাহিনী ভেঙ্গে সৈন্য সংখ্যা ১ লক্ষ্য করে দেওয়া হয় এবং ২. জার্মানির যুদ্ধ জাহাজগুলি ব্রিটেন কে দিয়ে দেওয়া হয়।
২৬. ভার্সাই সন্ধিকে 'আরোপিত সন্ধি' বা 'জবরদস্তি মূলক সন্ধি' বলা হয় কেন ?
ভার্সাই সন্ধিকে আরোপিত সন্ধি বা জবরদস্তি মুলক সন্ধি বলা হয়। এর কারণগুলির বিভিন্ন আলোচনা করা হলো,
- ১. যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির উপর জোর করে ভার্সাই এর সন্ধি চাপিয়ে দেয় যাতে পুনরায় জার্মানি শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে।
- ২. এই সন্ধি ছিল জার্মানির কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এবং জার্মান প্রতিনিধিদের আপত্তি আগ্রহ করে জোরকরে এই চুক্তিতে তাদের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় ।
২৭. ভার্সাই চুক্তির স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
ভার্সাই চুক্তির সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি ছিল। সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —
- ১. পৃথিবীর কূটনীতি ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিজয়ী পক্ষ সব সময় পরাজিত পক্ষের উপর একতরফা চুক্তি চাপিয়ে দেয়। তাই ভার্সাই চুক্তির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকরি হয়েছে।
- ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে মানুষের মনে জার্মানি সম্পর্কে যে ঘৃণার সঞ্চার হয়েছিল রচয়িতারা তা অপেক্ষা করতে পারেননি।
২৮. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি ফলাফল লেখ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েকটি ফলাফল লক্ষ্য। করা যায়। সেগুলি নিম্নের আলোচনা করা হলো –
- ১. প্রচুর সংখ্যক সেনা ও মানুষ মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়।
- ২. বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল,
- ৩. অনেক কলকারখানা, শহর, গ্রাম, বন্দর ধ্বংস হয়ে যায় ।
- ৪. জনগনের আর্থিক দুর্দশা ও বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
- ৫. ইউরোপের বেশ কয়েকটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে ।
২৯. কেন ' চোদ্দদফা নীতি ' ঘোষনা করেন ?
উড্রো উইলসন প্রথম চোদ্দদফা নীতি প্রবর্তন করেন। উড্র উইলসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ৮ জানুয়ারি, চোদ্দ দফা নীতিটি ঘোষিত হয়েছিল। এই চোদ্দদফা নীতিগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —-
- ১. বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা
- ২. গণতন্ত্র রক্ষা
- ৩. ন্যায় ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে আইনসম্মত শাসন স্থাপন করা এবং
- ৪. একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ।
৩০. জাতিসংঘ কখন গঠিত হয়?
উড্র উইলসন তার চোদ্দদফা নীতি শেষ করে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্য ছিল। সেই ঘোষণা অনুসারে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন হয় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি।