রক্তাক্ত রবিবার কী | মিনশেভিক ও বলশেভিক কথার অর্থ | কেরেনস্কি সরকারের পতনের কারণ | হুভার মোরাটোরিয়াম বলতে কী বোঝো | ভাইমার প্রজাতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়েছিল

প্রিয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা,

বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

রক্তাক্ত রবিবার কী | মিনশেভিক ও বলশেভিক কথার অর্থ | কেরেনস্কি সরকারের পতনের কারণ |  হুভার মোরাটোরিয়াম বলতে কী বোঝো | ভাইমার প্রজাতন্ত্র  কেন ব্যর্থ হয়েছিল




গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
Part 6


৫১. রক্তাক্ত রবিবার কী? 

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি রবিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফাদার গ্রেগরি গ্যাপনের নেতৃত্বে একদল নিরস্ত্র শ্রমিক রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসকে একটি স্মারকলিপি।  শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও জাতীয় পার্লামেন্টের দেওয়ার উদ্দেশ্য অভিযান শুরু করে । এই অবস্থায় রুশ সেনারা গুলি চালালে শতাধিক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয় । রাশিয়ার ইতিহাসে এই ঘটনা রক্তাক্ত রবিবার বা  ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব নামে পরিচিত । 


৫২. কেন ১৯০৫ খ্রিস্টাবদের বিপ্লবকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের 'মহড়া বলা হয়? 


 ১৯০৫  যে বিপ্লব হয়েছিল , তা এই বিপ্লবের ফলে  —

  • ১. রাশিয়া আইসেন্ট পিটাসবার্গ সহ মস্কো, রিগা  ইত্যাদি অঞ্চলে শ্রমিক ধর্মঘটের সূচনা হয় এবং ৪ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক এতে অংশ নেয় । 
  • ২.  এই বিপ্লব জার তন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষককে সচেতন করে তোলে এবং জারের ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে তারা প্রশ্ন তুলতে থাকে ।  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের পদ কে প্রশস্ত করে দেয় বলে অনেকে এই বিপ্লবকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের মহড়া বলে অভিহিত করেছেন। 


৫৩. মিনশেভিক ও বলশেভিক কথার অর্থ কী? 


 রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির সংখ্যালরঘিষ্ঠ সদস্যরা 'মেনশেভিক' এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা ' বলশেভিক' নামে পরিচিত। 

           ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এই পার্টির সদস্য ইলিয়াস লেনিনের মধ্য' নীতি ও আদর্শকে ' কেন্দ্র করে মত বিরোধ দেখা দেয় ও পার্টি ভেঙে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় । লেনিনের অনুগামী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় তারা বলশেভিক এবং মার্টভের অনুগামীরা মেনশেভিক নামে পরিচিত হয় । অবশেষে লক্ষ্য করা যায় অনুসারী ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই গোষ্ঠী পৃথক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। 


৫৪. কেরেনস্কি সরকারের পতনের কারণ কী?  


কেরেনস্কি সরকারের বিভিন্ন পতন লক্ষ্য করা যায়।  এই পতন গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো—

  • ১. সংস্কারের ব্যর্থতা :  রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। 
  • ২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যায় এবং রাশিয়ার ভেতরে জার্মানির অগ্রগতিকে আটকাতে ব্যর্থ হন। 
  • ৩. লেনিনের ভূমিকা : লাল ফৌজ কর্তৃক কেরেনস্কি সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা দখলে  ( ৭ নভেম্ব,  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে)  ঘটনায় কেরেনস্কি সরকারের পতন ঘটে । 


৫৫. সোভিয়েত রাশিয়ায় কখন দ্বৈত শাসন শুরু হয় ? 


১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ায় মার্চ বিপ্লব ও নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যবর্তী কালে একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রাদেশিক সরকার ও পেট্রোগ্রাড সোভিয়েত এর শাসন চলেছিল। এইভাবে রাশিয়ার এই দুই শাসনের অস্তিত্বকে লেনিন 'দ্বৈত শক্তি 'বলে অভিহিত করেছিলেন। বলশেভিকরা দলের নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিক ও সোভিয়েতের হাতে ক্ষমতা এলে দ্বৈত শাসনের অবসান হয় । 


৫৬.  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের  রুশ বিপ্লবকে 'নভেম্বর বিপ্লব' ও 'বলশেভিক বিপ্লব' বলা হয় কেন ? 


১৯১৭  খ্রিস্টাব্দের  অক্টোবর বিপ্লব ছিল রুশ বিপ্লবের দ্বিতীয় পর্যায়।  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে  রাশিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫-২৬ অক্টোবরের এই বিপ্লব টি যেহেতু বিশ্বের প্রচলিত ক্যালেন্ডারের ৭-৮ নভেম্বর তারিখে হয়েছিল তাই একে নভেম্বর বিপ্লব বলা হয় ।  যেহেতু   বলশেবভিক  দলের নেতৃত্বে এই বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছিল তাই তা বলসেভিক বিপ্লব নামেও পরিচিত হয়। 


৫৭.  সেভরের সন্ধির গুরুত্ব কী ? 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে মিত্র পক্ষের সঙ্গে তুরস্কের সেভির এর সন্ধি  হয়।   এই সন্ধি  স্বাক্ষরিত হয়েছিল হয়েছিল ১৯২০  খ্রিস্টাব্দের ১০  আগস্ট।  এর গুরুত্ব গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —-

  • ১. তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন : ইউরোপের তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং তুরস্কের সুলতান সিংহাসনচ্যুত হন। 
  • ২. ক্ষতিপূরণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য তুরস্ককে দায়ী করে তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।  যেমন - তুরস্ক সাম্রাজ্যের একাংশ ইংলান্ড । 
  • ৩. খিলাফৎ আন্দোলন : তুরস্কের সুলতান তথা খলিফা কে পুনরায় সিংহাসনে বসানোর জন্য তুরস্কের এবং ভারতের গড়ে ওঠে খিলাফৎ  আন্দোলন । 


৫৮ . 'হুভার মোরাটোরিয়াম ' বলতে কী বোঝো? 


১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক মহামন্তার প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । হুভার  ২০ জুন,  ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে,  প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন যুদ্ধ ঋণ ও অন্যান্য ঋণ  ববাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ আগামী এক বছর পরিশোধ করতে হবে না। এই ঘোষণা হুভার মোরাটোরিয়াম  নামে পরিচিত । 


৫৯. 'কালো বৃহস্পতিবার' ও 'কালো মঙ্গলবার' কী?  


১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের  ২৪ অক্টোবর  বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল  স্ট্রিট  শেয়ার মার্কেটে ঢস নামে এবং তা পরবর্তী মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয় । এর ফলে নিউইয়ারকের স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট বিপর্যস্ত হয়ে যায় ও অর্থনৈতিক মহামন্দার সূচনা হয়।  তাই নেতিবাচক অর্থে ওই দু'দিনকে যথাক্রমে ' কালো বৃহস্পতিবার'  ও 'কালো মঙ্গলবার' বলা হয় । 


৬০. মহামন্দার অবসান কিভাবে ঘটে ? 


এফ ডি রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নতির জন্য ব্যাপক সংস্কার মূলক ব্যবস্থা বা 'নিউ ডিল ' কর্মসূচি গ্রহণ করেন  । মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটে ও শিল্প বাণিজ্যের উন্নতি শুরু হয় । এই সমস্ত কিছুর   পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু ও শেষ কে কেন্দ্র করে মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটলে মহামন্দার ও অবসান ঘটে। 


৬১. ভাইমার প্রজাতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?  


ভাইমার প্রজাতন্ত্র ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল । এই কারণগুলি নিয়ে আলোচিত হলো —-

  • ১. প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই এই প্রজাতন্ত্র জনপ্রিয় ছিল না । 
  • ২. ভাইমার প্রজাতন্ত্রের আসীন সরকার  গুলি  দীর্ঘস্থায়ী হয়নি । 
  • ৩. হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের উৎখন ও ক্ষমতা দখলের ঘটনা এই প্রজাতন্ত্রের পতন নিশ্চিত করেছিল । 


৬২.   ফ্যাসিবাদ ও  নাৎসিবাদের  মধ্যে দুটি সাদৃশ্য উল্লেখ করো? 


 ফ্যাসিবাদ নাৎসিবাদের মধ্য বিভিন্ন সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।  সেগুলি নিম্নের আলোচনা করা হলো –

  • ১. রাজনৈতিক সাদৃশ্য : গণতন্ত্রেরর পরিবর্তে একদলীয় এক নায়কতন্ত্রী শাসন ও লক্ষ্য করা যায় । দলের একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য বাক স্বাধীনতা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক কেড়ে নেওয়া হয় । 
  • ২. অর্থনৈতিক সাদৃশ্য :উভয় মতাদর্শেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করার উপর জোর দেওয়া হয় । 


৬৩. স্পেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে  ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল ?  


একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সূচনা হয়।  স্পেনের গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে এগুলো শুরু হয় ।  সেগুলি নিয়ে আলোচিত হলো –

  • ১. ভারতীয় সমাজতন্ত্রী নেতা এম এন রায় স্পেনের একনায়কতন্ত্রের সমালোচনা করেন।
  • ২. মহত্মা গান্ধী ও  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন । 



৫ম অধ্যায় : বিংশ শতকের ইউরোপ থেকে ২ নম্বরের অন্য পার্টের লেখা গুলো


নবম শ্রেণির ইতিহাসের অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url