জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা | জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল | ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী | অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কি বোঝো | নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য
প্রিয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা,
বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা | জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল | ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী | অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কি বোঝো | নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য
৩১. জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা ছিল ?
জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছিল —
- ১. ইংল্যান্ড,
- ২.ফ্রান্স ,
- ৩. ইতালি,
- ৪. জাপান । অবশেষে পরবর্তীকালে
- ৫. রাশিয়া এবং
- ৬. জার্মানি স্থায়ী সদস্য পদ গ্রহণ করে ।
৩২. জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?
জাতিসংঘ ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মহৎ আদর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —
- ১. জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী ছিল না ।
- ২. জাতিসংঘের সংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতার না থাকা ,
- ৩. বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা
- ৪. জার্মানি ও ইতালির প্রতি ইংল্যান্ড ফ্রান্সের তোষণ নীতি এবং
- ৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।
৩৩. ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী?
লক্ষ্য করা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলে জার্মানির বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিক ইবার্ট এর নেতৃত্বে সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান দল একটি অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বার্লিনের কাছে ভাইমার নামক স্থানে এই অস্থায়ী প্রজাতন্ত্রীক সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্টিত হয় বলে এই প্রজাতন্ত্র ভাইমার প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত । এই প্রজাতন্ত্রটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে ।
৩৪. গুস্তাভ স্ট্রেসেম্যান কে ছিলেন ?
গুস্তাভ ছিলেন ভাইমার প্রজাতন্ত্রের চ্যান্সেলার। তিনি একজন প্রকৃতভাবে অর্থনীতিবিদ ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তার কৃতিত্ব ছিল। তার কৃতিত্ব গুলি নিম্নে আলোচিত হলো —
- ১. জার্মানির ওপর যে ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয় ভার্সাই সন্ধিতে সেই ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধানের জন্য তার প্রচেষ্টাতেই ডাওয়েজ পরিকল্পনা, ইয়ং কমিশন প্রভূতি গঠিত হয় ।
- ২. তার সময়েই এই জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
- ৩. ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির বিরোধিতা হ্রাস পায় ।
৩৫. অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কি বোঝো?
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি উবারের শাসনকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রথমে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে ও পরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসে বলে জানা যায়। এর ফলে ক্রয় বিক্রয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে মন্দা দেখা দেয় তা অর্থনৈতিক মহামন্দা নামে পরিচিত । জানা যায় মহামন্দা চলেছিল প্রায় এক দশক ।
৩৬. নিউ ডিল কি ?
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী মহামন্দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল । মার্কিন রাষ্ট্রপতি এফ ডি রুজভেল্ট ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, কৃষি, ব্যাংক, বাণিজ্য, বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য কিছু কর্মসূচি নেন । এই নতুন অর্থ সামাজিক কর্মসূচি হল নিউ ডিল বা নব বিন্যাস।
৩৭. ফ্যাসিবাদ কী?
ফ্যাসিবাদ হল ইতালিতে মুসোলিনি নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার ও তার উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ । মুসোলিনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও একনায়কতন্তী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে যা ফ্যাসিবাদ নামে অবিহিত ।
৩৮. ফ্যাসিস্ট দল কে, কেন প্রতিষ্ঠা করেন ?
ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন বেনিত মুসোলিনি। ফ্যাসিস্ট দলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেগুলি নিম্নে আলোচিত হলো —-
- ১. কমিউনিস্টদের ধ্বংস সাধন করা ।
- ২. সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং
- ৩. রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা ।
৩৯. নাৎসিবাদ কী?
হিটলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ হলো নাৎসিবাদ । এটি সংগঠিত হয়েছিল জার্মানিতে । এবং জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত নাৎসি দল ক্ষমতায় এলে জার্মানিতে এই মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই মতবাদ ও ফ্যাসিবাদে মতোই আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, এক নায়কতন্ত্রী, সর্বনিমন্ত্রণবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শ । হিটলারের লেখা ' মেইন ক্যাম্ফ' হল নাৎসিবাদের বাইবেল ।
৪০. নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ?
নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । দুটি পার্থক্য নিম্নে আলোচিত হলো –
- ১. নাৎসি বাদ ফ্যাসিবাদের তুলনায় বেশি ভয়ংকর ও উগ্রহ হলেও নাৎসিবাদ যতটাই ইহুদি বিদ্বেষী ছিল ফ্যাসিবাদ ততটা ছিল না ।
- ২. ফ্যাসিবাদ ইতালির অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারেনি এবং বেকার সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা থেকে গিয়েছিল । কিন্তু নাৎসিবাদ জার্মানিতে এই সকল বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে সফল হয়েছিল ।